অর্থনীতি পড়তে ভারতের পুনেতে গিয়েছিলেন অমিতাভ রেজা। ক্লাসরুমে মন বসেনি। বরং সময় পেলেই চলচ্চিত্র বিভাগের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে আর সিনেমা দেখে সময় কাটাতেন। এভাবেই সিনেমার নেশা পেয়ে বসে। প্রচুর সিনেমা দেখে তাঁর মধ্যে নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন জাগে। সিনেমার পোকা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরে নির্মাণে জড়িয়ে পড়েন অমিতাভ রেজা। ২০০০ সালে নির্মাণ করেন প্রথম টেলিভিশন ফিকশন। এর পর থেকেই শুরু। গত ২৫ বছরে এ নির্মাতার হাত দিয়ে দর্শক পেয়েছেন অসংখ্য বিজ্ঞাপনচিত্র, টেলিভিশন নাটক ও সিনেমা।
মাছরাঙা প্রোডাকশনের প্রযোজনায় অমিতাভের প্রথম টেলিভিশন ফিকশন ‘হাওয়াঘর’। পুত্রশোকে স্তব্ধ এক নারীর অতীতযাত্রার গল্প। অমিতাভ রেজার রচনায়, আকরাম খান ও অমিতাভ রেজা চৌধুরীর চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় এটি নির্মিত হয়। ২৫ বছর আগের স্মৃতি মনে করে নস্টালজিক হয়ে ওঠেন অমিতাভ, ‘কত আগের স্মৃতি, প্রথমবার নির্মাতা হিসেবে ক্যামেরার পেছনে দাঁড়ানো। সামান্য বাজেট। মানুষ এখনো যে নাটকটির কথা স্মরণ করেন, মনে হলেই আপ্লুত হই। সেই সময়ের বেটা ক্যামেরায় এই টিভি ফিকশনটির চিত্রগ্রহণ করেছিলেন অপু রোজারিও, সম্পাদনায় ছিলেন সামির আহমেদ, শব্দ করেছিলেন রতন পাল, শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়, পোশাক পরিকল্পনায় আফসানা মিমি আর সংগীত পরিচালনায় সায়ান চৌধুরী অর্ণব। কাজটির কথা মনে হলেই স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।’

অমিতাভ রেজা চৌধুরীপ্রথম আলো
দুই যুগে দেশের জনপ্রিয় অনেক বিজ্ঞাপনেরও নির্মাতা অমিতাভ রেজা। এই ২৫ বছরের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক পরিবর্তনের তিনি সাক্ষী। শুরুতে অনেক সীমাবদ্ধতা দিয়ে শুরু হলেও পরে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারও দেখেছেন এ নির্মাতা। এই পরিবর্তনকে কেমন চোখে দেখেন? উত্তরে অমিতাভ বলেন, ‘পৃথিবীর সব ইন্ডাস্ট্রিতেই তো পরিবর্তন এসেছে। আমরাও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। যখন শুরু করেছিলাম, এত আধুনিক প্রযুক্তি তো ছিল না। এখন কত সুযোগ। প্রযুক্তি আমাদের অনেক কাজকে সহজ করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।’
২৫ বছরের ক্যারিয়ারকে তিনি নিজে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? অমিতাভ বলেন, ‘বলতে গেলে এখনো ঠিক শেখা শুরু হয়নি। প্রতিদিনই শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো যুক্তরাষ্ট্রে আছি পরবর্তী সিনেমা নির্মাণের জন্য পড়াশোনা করতে। ভালো সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখি। কিছুই করতে পারিনি। ইচ্ছে আছে ভালো কিছু করার। আমি সিনেমা নিয়ে বাঁচতে চাই আর সিনেমা হলে মরে যেতে চাই। আমার সিনেমা বাজার পেতে হবে না, দেশ–বিদেশে উৎসবে যেতে হবে না, আমার সিনেমা এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি দেখে বিনোদিত হয় আর তাদের মননে আর চিন্তায় যদি দাগ কাটতে পারি, তাহলেই হবে।’
২৫ বছরের এ জার্নির কৃতিত্ব দুজন মানুষকে দিতে চান অমিতাভ। যাঁরা না থাকলে আজ এ জায়গায় থাকতেন না বলে মনে করেন এ নির্মাতা। জানান, শুরু থেকেই তাঁর পাশে ছায়া হয়ে ছিলেন দুই প্রযোজক—মাহজাবিন রেজা ও আসাদুজ্জামান। অমিতাভের কথায়, ‘সেই প্রথম থেকে এ দুজন মানুষ আমার পাশে আছে। যত ঝড়, সংগ্রাম এসেছে—তারা আমার পাশে না থাকলে এ রাস্তা পাড়ি দিতে পারতাম না।’
২৫ বছরের অভিজ্ঞতা তরুণদের মধ্যে ভাগ করে দিতে অমিতাভ শুরু করেছেন সিনেমার স্কুল ‘সিনেমা পাঠশালা’। চলতি বছর ১০ জন তরুণকে দিয়ে শুরু হয় প্রথম ব্যাচ। এখন দ্বিতীয় ব্যাচের ভর্তি চলছে। অমিতাভের স্বপ্ন এখন এটিকে ঘিরেই। এ নির্মাতা বলেন, ‘আমি তো প্রতিদিন শিখি, এখন নিউইয়র্ক ফিল্ম ইউনিভার্সিটিতে একটা কোর্স করছি। এর মধ্যে আমার নিজের সিনেমা পাঠশালার যাত্রা শুরু হলো। প্রথম ব্যাচের দশজন বের হচ্ছে, তাদের নিয়ে “সিনেমা পাঠশালা স্ক্রিপ্ট ল্যাব” থেকে এখন ১০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করব।’
২০১৬ সালে ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত। এ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পান অমিতাভ। ২০১৯ সালে শুরু করেন রিকশা গার্ল’ ছবির কাজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিনেমাটি মুক্তি পায় দেশের প্রেক্ষাগৃহে। বড় পর্দায় কেন নিয়মিত দেখা যাচ্ছে না? অমিতাভ বললেন, ‘স্বপ্ন দেখি ভালো সিনেমা বানানোর। তবে স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেলে তো আর তা স্বপ্ন থাকে না। আর স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচেও না। আগামী বছর সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা আছে। ঈদে হইচইতে মুক্তি পাবে ওয়েব সিরিজ “বোহেমিয়ান ঘোড়া”।’